১. দায়িত্বশীলতা তাঁর মূল বৈশিষ্ট্য
একজন ভালো পুরুষের আচরণে দায়িত্বশীলতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি কোনো কাজ ফেলে রাখেন না এবং অজুহাত দেখান না। পরিবার হোক, কর্মক্ষেত্র হোক বা সামাজিক দায়িত্ব—সব ক্ষেত্রেই তিনি নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। এমন দায়িত্ববোধ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা তৈরি করে। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, মানসিক ও সামাজিক দায়িত্বও তিনি সমান গুরুত্ব দিয়ে পালন করেন।
২. সম্মান প্রদানে বিশ্বাসী
ভালো পুরুষ কাউকে ছোট করার চেষ্টা করেন না। না নারীকে, না সন্তানকে, না সহকর্মীকে। তিনি জানেন, সম্মান শুধু বয়স বা পদমর্যাদা দিয়ে নয়, মানুষের মর্যাদা দিয়ে তৈরি হয়। তাঁর ভাষা ভদ্র, আচরণ সৌজন্যমূলক এবং মনোভাব সর্বদা উন্মুক্ত। অন্যের মতামত তিনি মন দিয়ে শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।
৩. আবেগ প্রকাশে সচেতন
অনেকে মনে করেন পুরুষ মানেই কড়া ও আবেগহীন। কিন্তু একজন ভালো পুরুষ জানেন আবেগ প্রকাশ করা দুর্বলতা নয়। তিনি রাগ, কষ্ট বা হতাশা চাপা দেন না; প্রয়োজন হলে সহায়তা চান। এ স্বচ্ছতা তাঁর সম্পর্ককে করে সুস্থ ও মজবুত।
৪. সঙ্গীর স্বপ্নের প্রতি সমর্থনশীল
ভালো পুরুষ নিজের সাফল্যকে একা দেখে না। তিনি সঙ্গীর স্বপ্ন ও স্বাধীনতাকে সমান গুরুত্ব দেন। সঙ্গীর সাফল্যে তিনি ঈর্ষান্বিত হন না, বরং গর্বিত হন। পরিবার ও সমাজে এমন সমর্থনশীল মনোভাব সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।
৫. ভুল স্বীকার করতে জানেন
ভুল করা মানুষই করে, কিন্তু ভুল স্বীকার করা বড় কথা। একজন ভালো পুরুষ তার ভুল স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না। তিনি জানেন, ‘সরি’ বলা কোনো অপমান নয়, বরং পরিপক্বতার পরিচায়ক। এটি তাঁকে অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
৬. প্রতিশ্রুতির প্রতি নিষ্ঠাবান
প্রতিশ্রুতির প্রতি তাঁর নিষ্ঠা দৃঢ়। তিনি কোনো কথাই ফেলে রাখেন না। পরিবার, বন্ধু বা কর্মক্ষেত্রে তাঁর ওপর সব সময় ভরসা করা যায়। কথার মর্যাদা রাখা, এটি একজন ভালো পুরুষের স্বভাব।
৭. নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল
ভালো পুরুষ নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা বজায় রাখেন। তিনি নারীর স্বাধীনতা, মতামত ও ক্যারিয়ারকে সমান গুরুত্ব দেন। কোনো অবস্থাতেই তিনি নারীর মর্যাদায় আঘাত হানেন না। সমাজে নারীর সমানাধিকারের পক্ষে তিনি দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান।
৮. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্যশীলতা
অযথা রাগ বা হিংসায় প্রভাবিত হন না। চাপের মুহূর্তে তিনি আবেগে ভেসে সিদ্ধান্ত নেন না। তিনি জানেন, এক মুহূর্তের ভুল সিদ্ধান্ত জীবনভর ক্ষতি করতে পারে। তাই তাঁর আচরণ শান্ত, সংযত এবং পরিণত।
৯. পরিবার ও বন্ধুত্বের মূল্যায়ন
একজন ভালো পুরুষ জানেন ক্যারিয়ার গুরুত্বপূর্ণ হলেও পরিবার ও প্রিয় মানুষদের সময় দেওয়া আরও জরুরি। তিনি পারিবারিক দায়িত্ব ভাগ করে নেন, সন্তানদের যত্ন নেন, বন্ধুদের পাশে থাকেন। বাড়ির কাজ, বাজার বা রান্না—এ দায়িত্বগুলো তিনি যৌথ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকেন।
১০. নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা
ভালো পুরুষ কখনো আত্মতুষ্ট হন না। তিনি প্রতিদিন শিখতে চান, ভুল থেকে শিক্ষা নেন, অভ্যাস ও চরিত্র উন্নত করেন। নিজের উন্নয়নকে জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন। এটি শুধু তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে উন্নত করে না; পরিবারের ও সমাজের জন্যও তিনি আরও মূল্যবান হয়ে ওঠেন।
বিশ্ব পুরুষ দিবস শুধু পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব উদযাপন করে না। এটি পুরুষত্বের মানবিক, দায়িত্বশীল ও কোমল দিককে স্বীকৃতি দেয়। ভালো পুরুষ শক্ত হন, কিন্তু সেই শক্তি ভালোবাসায় ভরা। তিনি সুরক্ষা দেন, আধিপত্য বিস্তার করেন না। তিনি পথ দেখান, আবার প্রয়োজন হলে হাত ধরে হাঁটেন। আজকের দিনে প্রয়োজন পুরুষত্বের নতুন সংজ্ঞা বোঝা, একজন ভালো পুরুষ মানেই শুধু অর্থনৈতিক বা সামাজিক ক্ষমতা নয়, বরং মানবিক, সহানুভূতিশীল ও দায়িত্বশীল চরিত্রের প্রতীক।
Leave a Reply