ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী শুক্রবার রাতে সমকালকে বলেন, ‘ফরিদা পারভীন এখন লাইফ সাপোর্টে আছেন। তাঁর কিডনি, ব্রেইন কাজ করছে না। লাঞ্চে সমস্যা। হার্টে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন আছে। রক্তের ইনফেকশন সারা শরীরে ছড়িয়ে গেছে। তাঁর মাল্টি অর্গান ফেইলিউর। রক্তচাপ কম থাকার কারণে ডায়ালাইসিস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাঁকে আমরা ভেন্টিলেটরে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সার্বক্ষণিক চিকিৎসার জন্য ৬ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড করেছি। ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা গেলে বলা যাবে অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে।’
এদিকে ফরিদা পারভীনের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং ব্লাডপ্রেশার নেই বলে জানিয়েছেন ফরিদা পারভীনের বড় ছেলে ইমাম জাফর নুমানী। বৃহস্পতিবার রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মায়ের শারীরিক অবস্থা জানিয়েছেন তিনি।
তিনি লিখেছেন, ‘আম্মাকে (ফরিদা পারভীন) গত বুধবার বিকেল থেকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। গত বিকেল থেকেই উনার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্লাডপ্রেশারও নেই। এখন ডাক্তাররা সর্বোচ্চ মাত্রার ওষুধ দিয়ে কৃত্রিমভাবে তাঁর ব্লাড প্রেশার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। মেশিনের মাধ্যমে তাঁর ফুসফুসটা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই পরিস্থিতিতে আম্মার শারীরিক অবস্থার উন্নতির আর তেমন কোনো আশা নেই। তারপরও, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আমরা আরও কিছু সময় ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে এই লাইফ সাপোর্টটা চালিয়ে নিচ্ছি। সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে।’
পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও নিশ্চিত করছি, আম্মার চিকিৎসার জন্য আর্থিক বা অন্য কোনো ধরনের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। সবাই আম্মার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহপাক তাঁর অসীম দয়ায় আম্মার এই শেষ সময়কে সহজ ও শান্তিময় করুন।’
চলতি বছরের শুরুতে একবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ফরিদা পারভীন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাসায় ফেরেন। গত ৫ জুলাই শ্বাসকষ্ট গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসাসেবা হয়েছিল। কিছু সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরনে তিনি। এরপর রুটিন চিকিৎসা হিসেবে আইসিউতে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে চিকিৎসার চলছিল তাঁর। গত বুধবার থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে দেশাত্মবোধক গান গাইলেও তাঁর পরিচয় গড়ে ওঠে লালন সংগীতের মাধ্যমে। গুরুদের সাহচর্যে তিনি লালনের গানকে নিজের হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে শিখিয়েছিলেন। তাঁর কণ্ঠে ‘মিলন হবে কত দিনে, ‘অচিন পাখি’ প্রভৃতি গান আজও বাঙালির চেতনার অংশ হয়ে আছে।
সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। জাপান সরকার তাঁকে সম্মানিত করে কুফুওয়া এশিয়ান কালচারাল পদক দিয়ে। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে নানা সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। ফরিদা পারভীন কেবল নিজের গান করেননি; বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লালনের গান শিখিয়েছেন। তাঁর উদ্যোগে তোলা হয় অচিন পাখি স্কুল, যেখানে শিশুদের শেখানো হয় আধ্যাত্মিক শক্তির মর্ম।
Leave a Reply