1. tanvir.love24@gmail.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  2. news@nagornews24.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজস্ব প্রতিবেদক
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০১ পূর্বাহ্ন

জুলাইয়ে ভাইরাল রক্তমাখা সেই ছবির মাহবুব শিবিরের প্যানেলে

  • সময়: শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৩ বার

জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ ঘোষিত) হামলায় আহত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মো. মাহবুবুর রহমান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া তার রক্তমাখা ছবি আন্দোলনে শক্তি জুগিয়েছিল বারুদের বেগে। অভ্যুত্থানের পর পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়া সেই মাহবুব এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

মাহবুবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।

গত বছর কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিসহ কয়েকজনকে অপহরণ করে ছাত্রলীগ। পরে তাদের প্রক্টরের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। আটক সমন্বয়কদের উদ্ধারে রাস্তায় সড়কে নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে পৌঁছালে তাদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে গিয়ে আক্রমণের প্রধান শিকার হন মাহবুব। কোটা আন্দোলনের একেবারে শুরুর দিক থেকেই যুক্ত হয়েছিলেন তিনি।

ওই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের সামনে মেয়েরা ছিল। আমরা যখন শহীদ মিনারের কাছাকাছি পৌঁছাই, ওই সময়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-শস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে এগিয়ে আসে। এতে শিক্ষার্থীরা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে। কিন্তু আমরা তো মেয়েদের রেখে যেতে পারি না। মেয়েদের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি সামনে থাকাতে তাদের (ছাত্রলীগ) সকল আক্রোশ আমার উপরে পড়েছে।

তিনি বলেন, কয়েকজন আমাকে বুকে-পিঠে আঘাত করেছে। মাথায় আঘাত করায় আমি পড়ে যাই। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন আমি সেন্সলেস (অজ্ঞান) হয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিথর হয়ে শুয়েছিলাম, ওই ‍মুহূর্তেও আমাকে পিটিয়েছে তারা। ঘটনার আকস্মিকতার পর আমি যখন বুঝতে পারি আমাকে পেটানো হচ্ছে, উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমার মাথা থেকে তখনও অনেক বেশি রক্ত পড়ছিল। আমি কালেমায়ে শাহাদাত পড়তে শুরু করি, যেভাবে রক্ত পড়ছে মনে হচ্ছিল আমি মারা যাব।

 

মাহবুব জানিয়েছেন, আহত হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রক্তপাত বন্ধ হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার কপালে ৫টি সেলাই পড়ে। চিকিৎসকরা তাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে বলেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পরই সড়কে নেমে আসেন এই শিক্ষার্থী। বলেন, অসুস্থতার জন্য বাড়ি থেকে অনুমতি না থাকলেও চলে গিয়েছিলাম। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জীবনের মায়া ছেড়ে আন্দোলনে ছিলাম। গণঅভ্যুত্থানের পর পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়েছি।

আমি অতীতে ছিলাম না, বর্তমানে শিবিরকে ভালো পেয়েছি

চাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল না। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার কাছে প্রস্তাব আসা শুরু হয়। তারা বলেছে, জুলাইয়ে তোমার অবদান আছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তোমার ভয়েস ছিল, তোমার আহত হওয়ার পরে মূলত আন্দোলন জোরালো হয়েছে। এখনও তোমার ভয়েস রেইজ করার সুযোগ আছে, তুমি আমাদের প্যানেলে আসো। আমি চিন্তা করলাম, যাদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে পড়ার টেবিলে চলে গিয়েছিলাম, সত্যিকার অর্থে তাদের অনেকে আমাদেরকে আশাহত করেছে, সে রকম কোনো পরিবর্তন হয়নি। যেহেতু এখন সুযোগ এসেছে চাকসুর মাধ্যমে পরিবর্তনের, সে সুযোগটা নেওয়া উচিত। আমারও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে যাইনি এবং আমি কিছু করতে পারব শিক্ষার্থীদের জন্য।

তিনি বলেন, আমি সবার জন্য ওপেন ছিলাম। আমার শিবিরের প্যানেলে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, আমি আহত হওয়ার পর থেকে তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের যে ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স, এটা আমার ভালো লাগে। আমাকে সহযোগিতা ছাড়াও ৫ আগস্টের পরে তারা শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব বেশ কিছু কাজ করেছে। এগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের যে মানসিকতা, আমার কাছে মনে হয়েছে আমি তাদের প্যানেলে গেলে কাজগুলো করতে পারব। এ ছাড়া আমি তাদের জিজ্ঞাসাও করেছি, ভাই আমি নিজের ভয়েস রেইজ করতে পারব কিনা? বলেছে যে, আপনার স্বাধীনতা আছে, সব কিছু করতে পারবেন। এই শর্ত দিয়েই তাদের প্যানেলে গিয়েছি। আর শিবিরের ব্যাপারে অতীতের যে অভিযোগগুলো আছে, আমরা কিন্তু শিবিরকে ওইভাবে দেখি না। বর্তমানের শিবিরের বিরুদ্ধে আগের অভিযোগগুলো এখন পর্যন্ত পাইনি। আমি অতীতে ছিলাম না, বর্তমানটা দেখছি যতটুকু আমার সুযোগ হয়েছে। এসবের ভিত্তিতে গিয়েছি, কেউ যদি আমাকে ট্যাগ দেয়, দিক। আমি মেনে নিয়েই এসেছি। এর বাইরে রাজনৈতিক দলের সাথে আমি কখনোই জড়িত ছিলাম না। তবে সব দলের সাথে আমি একটা ক্ষেত্রে জড়িত, যারাই ভালো কাজ করে, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে, আমি তাদের পক্ষে, আওয়ামী লীগ ছাড়া যে দলেরই হোক।

বিভাগের সঙ্গে মিল রেখে পদ বেছে নিয়েছি

শিক্ষার্থীদের জন্য কিভাবে কাজ করবেন জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, সব প্যানেলই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে কোন পদে যেতে চাই। আমি আমার বিভাগের সঙ্গে মিল রেখে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেছে নিয়েছি। এখানে আমার অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। গঠনতন্ত্রে যা উল্লেখ আছে, তা তো করতে পারবই, এর বাইরেও একটা জিনিস আমার সবচেয়ে বড় কনসার্ন। এখনও আমাদের লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকিং সেবা নিতে হয়। এটা নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে, তাও তা অনলাইন করা হচ্ছে না। আমি বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব নিয়ে অনলাইন ব্যাংকিং চালু করব। যেভাবেই হোক, এটা আমি করব।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত একাডেমিক ই-মেইল যাতে প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই দেওয়া হয় এবং এর মান বাড়ানো যায়, সেটি নিয়ে কাজ করব। সম্ভবত ৬০ জিবি পর্যন্ত এর স্টোরেজ আছে, আর মেয়াদ শেষ হলেই ডাটাগুলো হারিয়ে যায়। এটা নিয়ে কাজ করব। এরপরে বিজ্ঞানের ল্যাবগুলো নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। যতটুকু সম্ভব, শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলতে  পারি, করব। এ ছাড়া আমি কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী, কিন্তু আমার বিভাগেই ওয়াইফাই অ্যাভেইলেবল না। বাকি বিভাগগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। প্রতিটি বিভাগে, বিশেষ করে যেগুলোতে দরকার, ওয়াইফাই সংযোগের জন্য কাজ করব। একাডেমিক এরিয়া, রিডিং রুম, লাইব্রেরি-এগুলোতে যাতে ওয়াইফাই পরিষেবাটা ভালো হয়, এটি নিয়ে কাজ করব। প্রাথমিকভাবে এই চারটা ইচ্ছা। এর বাইরে যা করা দরকার আমি করব।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন