নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। মশাবাহিত এই রোগটির প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নারায়ণগঞ্জে নতুন করে একজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ জনে। শুধু চলতি জুন মাসেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকরভাবে হচ্ছে না। স্থানীয় সূত্র বলছে, বিশেষ করে নাসিক (নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন) এবং বিভিন্ন পৌরসভা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই মশার প্রজননস্থলগুলো থেকে সময়মতো পানি অপসারণ কিংবা লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে না।
এদিকে, শহরের বিভিন্ন এলাকায়,বিশেষ করে দেওভোগ, খানপুর, চাষাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা এবং বন্দরে,ভবনের নিচতলা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নির্মাণাধীন ভবন ও পরিত্যক্ত টায়ারে প্রচুর পরিমাণে জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা।
শহরের বড় হাসপাতালগুলোতে এখনও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড বা বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রতিদিনই কয়েকজন করে জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, উপসর্গ দেখে অনেককেই ডেঙ্গুর সম্ভাব্য রোগী হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও পরীক্ষা ছাড়া তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খানপুর হাসপাতালের একজন সিনিয়র ডাক্তার বলেন,
এখনো যে হারে রোগী বাড়ছে, তা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত রিপোর্ট চাওয়া হলেও আমাদের নিজস্ব প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। যদি পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়, আমরা চাপে পড়ে যাবো।
নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ার অন্যতম কারণ জনসাধারণের অসচেতনতা। অনেকে এখনও ডেঙ্গুর বিপদ সম্পর্কে জানেন না বা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাদের বাড়ির আঙিনায় বা ছাদে পানি জমে থাকলেও সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। মনে করছেন নগরীর সচেতন মানুষ।
এ বিষয়ে শহরের বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন,আমরা নিজেরা যতটা সচেতন থাকি, আশেপাশের মানুষ যদি তা না মানে, তাহলে একার সচেতনতা কোনো কাজে আসে না। চারদিকেই মশা, অথচ কোথাও স্প্রে হচ্ছে না।”
সূত্রনুসারে,নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে মাইকিং করা হলেও বাস্তব কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত। ২০২৪ সালের ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির পর সিটি কর্পোরেশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মাসে অন্তত ৩ বার করে ফগিং কার্যক্রম চালাবে। কিন্তু বাস্তবে তা বেশিরভাগ এলাকাতেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
নাসিকের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা মেডিক্যাল অফিসার ডা. শেখ মোস্তফা আলী জানান,জনবল সংকট এবং বাজেট ঘাটতির কারণে আমরা প্রত্যাশামতো সব এলাকায় ফগিং চালাতে পারছি না। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন অভিযান চালানো হবে বলে আশা করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ড. মশিউর রহমান জানায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জেলার মোট ৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শহরের অভ্যন্তরীন এলাকার বাসিন্দা। জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৩-তে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি।
নগরীর স্বাস্থ বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর যে বিস্তার শুরু হয়েছে, তা যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা যায়—তবে খুব অল্প সময়েই এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বর্ষা মৌসুম সামনে, তাই এখনই দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ। শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে প্রতিটি নাগরিককেই সচেতন হতে হবে। সচেতনতা, তদারকি ও সমন্বিত ব্যবস্থা না থাকলে, নারায়ণগঞ্জের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু রোধ করা কঠিন হবে।।
Leave a Reply