ঢাকা, ১ জুন ২০২৫: দীর্ঘ এক যুগের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফিরে পেয়েছে তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত দলীয় নিবন্ধন। এই প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে তাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে সক্রিয় হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে, এনেছে এক ধরনের স্বস্তি। কিন্তু এই বিজয়ের দিনেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ছাত্রশিবির নেতা শহীদ খলিলুর রহমান মল্লিকের স্মরণে তার স্বজনদের হৃদয়ে বাজছে এক বিষাদের সুর, যেখানে আনন্দের রেশ নয়, বরং দীর্ঘশ্বাসই প্রধান।
সেদিনের রক্তাক্ত স্মৃতি ও এক অমলিন আত্মদান:
২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট। সেদিন হাইকোর্টের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রতিবাদে দেশব্যাপী ডাকা হয়েছিল হরতাল। সেই হরতালের প্রথম দিনেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রাজপথে পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিল এক সম্ভাবনাময় প্রাণ— খলিলুর রহমান মল্লিক। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা মল্লিকপাড়া গ্রামের আব্দুল বাতেন মল্লিক ও জামেলা বেগমের এই মেধাবী সন্তান তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার এই অকালমৃত্যু সেদিন জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল, জন্ম দিয়েছিল তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের।
ছাত্রশিবির নেতার হৃদয়ের আর্তি:
আজ যখন দলীয় নিবন্ধন ফিরে আসার খবরে জামায়াত নেতাকর্মীরা আনন্দিত, তখনো শহীদ খলিলুর রহমান মল্লিকের জন্য বুকের গভীরে অব্যক্ত বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন তার পরিবার ও সহযোদ্ধারা। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ দেলওয়ার হোসেন তার ফেসবুক পোস্টে সেই নীরব কান্নাকেই যেন ভাষা দিয়েছেন। তার মর্মস্পর্শী উক্তি, “নিবন্ধন ফিরেছে, কিন্তু শহীদ ভাইয়ের জীবন ফিরলো না…” যেন এক যুগের জমাট বাঁধা কষ্টের প্রতিধ্বনি। তিনি আরও প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, “আজ এই বিজয়ের দিনে প্রশ্ন রয়ে গেল—আমার ভাইয়ের রক্তের মূল্য কে দেবে? তার পরিবারের খালি চোখে তাকিয়ে থাকা সন্তানটি কি ফিরে পাবে মায়ের স্পর্শ?” এই প্রশ্নগুলো কেবল শহীদ খলিলুর রহমান মল্লিকের জন্যই নয়, বরং এমনই অসংখ্য রাজনৈতিক আত্মত্যাগের প্রেক্ষাপটে উচ্চারিত এক শাশ্বত আর্তি।
প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দোদুল্যমানতা:
জামায়াত নেতৃবৃন্দ এই নিবন্ধন প্রাপ্তিকে ন্যায়বিচারের জয় হিসেবে দেখছেন। তাদের বিশ্বাস, যে নিবন্ধন বাতিলের প্রতিবাদে খলিলুর রহমান মল্লিকের মতো অসংখ্য কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন, সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই আজ এই বিজয় এসেছে। তবে, খলিলুর রহমান মল্লিকের পরিবারের কাছে এই রাজনৈতিক প্রাপ্তি কেবলই একটি পরিসংখ্যান মাত্র। কোনো স্বীকৃতিই তাদের বুকের শূন্যতা পূরণ করতে পারবে না। তারা আজও প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেন তাদের প্রিয় সন্তানের অনুপস্থিতি, যা কোনো বিনিময় মূল্যেই পূরণ হওয়ার নয়।
দলীয় নিবন্ধন ফিরে আসার মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী নতুন উদ্যমে তাদের রাজনৈতিক পথচলা শুরু করতে পারে। কিন্তু তাদের এই পথচলার প্রতিটি ধাপে খলিলুর রহমান মল্লিকসহ সকল শহীদের আত্মত্যাগ এক উজ্জ্বল স্মারক হয়ে থাকবে। তাদের স্মৃতিই হয়তো দলটির ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে, যেখানে রাজনৈতিক প্রাপ্তির পাশাপাশি আত্মত্যাগের মহিমাও সমানভাবে উচ্চারিত হবে।
Leave a Reply