1. tanvir.love24@gmail.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  2. news@nagornews24.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন

এসএসসি ফলাফল প্রকাশের দিনে পরীক্ষার্থীর পরিবারের করণীয়

  • সময়: বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫
  • ১০ বার
প্রতিকী ছবি
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনটি শুধু একজন শিক্ষার্থীর নয়, তার পুরো পরিবারের জন্য এক গভীর আবেগে জড়ানো মুহূর্ত। মাসের পর মাস পড়াশোনা, টেনশন, রাত জাগা, দুশ্চিন্তা সব কিছুর যেন একটা চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পায় এই দিনে। বাবা-মায়ের আশা, ভাই-বোনের কৌতূহল, প্রতিবেশীর জিজ্ঞাসা, আত্মীয়দের মন্তব্য সব মিলিয়ে পরিবেশটিই হয়ে ওঠে এক ধরণের মানসিক পরীক্ষার মতো। এই সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সন্তানের পাশে দাঁড়ানো, তাকে বোঝা, এবং ভালো-মন্দ যাই হোক— নির্বিচারে তাকে ভালোবাসা।

পরিবারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ফলাফল প্রকাশের আগেই সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করা। “ফল যা-ই হোক, আমরা তোর পাশে আছি”— এই ছোট্ট বাক্যটা অনেক সময় সন্তানকে বিশাল এক মানসিক ভরসা দেয়। অনেকেই হয়তো মুখে বলে না, কিন্তু ভেতরে ভয়, টেনশন, অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন গুনছে। মা-বাবার দায়িত্ব হলো সেই চুপচাপ দুশ্চিন্তার ভেতরে আলো ফেলা, জানিয়ে দেওয়া যে ফলাফলে জীবন থেমে যায় না।

ফলাফল বের করার সময়টাও খুব কৌশলের সঙ্গে সামলাতে হয়। যেহেতু ওয়েবসাইটে অনেক ভিড় হয়, তাই রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বোর্ডের নাম এসব আগেই লিখে রেখে প্রস্তুত থাকা ভালো। কেউ যদি প্রযুক্তি বিষয়ে একটু বেশি পারদর্শী হয়, তবে সে যেন এই দায়িত্বটা নেয়। এই সময় পরীক্ষার্থীকে আরেকবার নতুন করে উদ্বিগ্ন করা যাবে না, যেন সে ভাবতে না থাকে, “আমার রেজাল্টই কেন আসছে না?”

ফলাফল দেখে যদি সন্তানের মুখে হাসি ফোটে, তবে তা উদযাপন করা উচিত। ছোট একটা কেক, প্রিয় খাবার, বা স্রেফ একটা আলিঙ্গন এসবই তার জীবনের এই আনন্দময় মুহূর্তকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে। কিন্তু যদি ফলাফল আশানুরূপ না হয়? যদি তার মুখে ভয়ের ছাপ পড়ে, চোখের কোণে পানির ঝিলিক নামে? তখন পরিবারের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়।

এই মুহূর্তে তিরস্কার, অভিযোগ, তুলনা সবই বিষাক্ত। “তোর বন্ধু তো গোল্ডেন পেল”, “তুই কেন এ প্লাস পেলি না?”— এমন কথাগুলো একবার উচ্চারিত হলে তা ভোলানো খুব কঠিন। বরং বলা উচিত, “সবাই তো ভালো করে না, কিন্তু তোর চেষ্টা আমরা দেখেছি। তুই আবার ঘুরে দাঁড়াবি।” সন্তানের চেষ্টা, নিষ্ঠা, এবং অধ্যবসায়ের প্রশংসা করাটা ওর ভবিষ্যতের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।

মনে রাখতে হবে, এ বয়সে একটা ফল খারাপ হওয়া মানেই অনেকের কাছে যেন পুরো ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যাওয়া। অথচ জীবনটা তার চেয়েও অনেক বড়, অনেক বিস্তৃত। পরিবারের উচিত সেই বড় ছবিটা সন্তানকে দেখানো। কলেজে ভর্তি, নতুন বন্ধু, নতুন সুযোগ এসব নিয়ে কথা বলা, তাকে ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী করে তোলা।

এছাড়াও, কেউ কেউ ফল খারাপ হওয়ার পর নিজেদের ব্যর্থ ভাবতে থাকে, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখন হয়তো এক কাপ চা নিয়ে পাশে বসে বলা, “এই ফলটাই তোর সব না, তুই অনেক বড় হবি”— এই কথাগুলোই হয়ে যায় আশার আলো।

সব শেষে, পরিবারকে বুঝতে হবে ফলাফল প্রকাশের দিনটা একটা প্রাপ্তির দিন হলেও, এর চেয়েও বেশি এটা এক মানবিকতার পরীক্ষার দিন। সন্তান তখন তার সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা, ভরসা, সহানুভূতি খুঁজে বেড়ায় তার আপনজনদের মধ্যে। পরিবার যদি সেই ভালোবাসাটা নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারে, তবে সে শুধু এসএসসি নয়, জীবনের যেকোনো পরীক্ষায় জয়ী হতে পারবে।

সন্তানের হাতে ফলাফলের কাগজ নয়, পরিবারের হাতে থাকা উচিত তার মন, তার চোখের ভাষা, তার নিঃশব্দ শঙ্কা। এই অনুভবটাই তার ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়াবে। আজ যদি আপনি পাশে থাকেন, কাল সে আপনাকে গর্বের সঙ্গে বলবে, “আমার পরিবার কখনো আমার উপর থেকে বিশ্বাস হারায়নি।” সেই আত্মবিশ্বাসই হবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন