ঢাকা জেলার সাভার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নামা গেন্ডা মোল্লা মার্কেট এলাকার পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি মো: ফজলুল হক ফালানের ছেলে আহমেদ ফয়সাল। বর্তমানে তিনি সাভার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, সারা দেশসহ রাজধানী ও সাভারে ৫ই আগস্টে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে অংশ নেন ছাত্রদল নেতা আহমেদ ফয়সাল। ১ ঘণ্টার ব্যবধানে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ৩৬টি ছোড়া গুলি বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তার সহযোগীরা তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, ছাত্রদল করার কারণে আওয়ামী সরকারের মামলা ও হামলারও শিকার হয়েছে এই ছাত্রদল নেতা। এমনও কি তাকে পরপর ৩ বার হতে হয়েছে কারাবরণ। এখানেই তিনি ক্ষ্যন্ত নন, শরীরে ২১টি ছররা গুলির অমানুষিক যন্ত্রণা নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে এই ছাত্রদল নেতাকে। দলের জন্য জীবন দিতে হলেও দিবেন, তবুও পিছু হটবেন না।
আহত ছাত্রদল নেতা আহমেদ ফয়সাল জানান, শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে আন্দোলনটি গড়ায় সরকার পতনের দাবিতে। ওই আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং পুলিশ নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাতে থাকে। ৫ই আগস্ট তিনি যখন সাভার থানা স্টান্ড এলাকায় যান সেসময়ে মুক্তির মোড় এলাকা থেকে পুলিশ বাহিনী রাবার বুলেট, টিয়ারসেল, ছররা গুলি করতে থাকে। এসময় আইলেন টপকে দৌড় দিলে একাধিক ছররা গুলি আমার শরীরে বিদ্ধ হয়। এমসয় প্রাণ যায় অনেকের। আমিও নিজেকে আর থামাতে পারিনি। কিন্তু মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ছররা গুলিতে আমার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আমি মনে করেছিলাম, এই বুঝি আমার ওপারে যাওয়ার ডাক পড়েছে।
তিনি আরও জানান, অজ্ঞান হয়ে পড়লে আমাকে অন্য আন্দোলনকারীরা উদ্ধার করে সাভার স্পেশালিস্ট হাসপাতালে নিয়ে যান।সেখানে চিকিৎসকরা তখন কেবল অপারেশন করে ১৫টি গুলিই শরীর থেকে বের করা যায়। চিকিৎসার পর এখনো শরীরের বামপাশের পা থেকে কাঁধ পর্যন্ত অন্তত ২১টি গুলি রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন ব্যথার ওষুধ খেয়ে নাকি থাকতে হবে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া মো: সামিদুল নামে ফয়সালের এক সহযোদ্ধা জানায়, আমরা যখন ফয়সালের সাথে আন্দোলনে যাই। এসময়ে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী একাধারে গুলি ছুড়তে থাকে, ওই গুলিতে ফয়সাল গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উদ্ধার করতে গেলে সন্ত্রাসীরা রাম দও দিয়ে আমার পায়ে কোপ দেয়। এসময়ে আমি দৌড় দিলে সেই কোপ রাম দায়ের ওল্টো পাশ আমার পায়ে গিয়ে লাগে। এতে আমি গুরুতর আহত হই, তবে ঠিকভাবে কোপ লাগলে, আমার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। আমি ঘটনাস্থল থেকে ফয়সালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। যদি আমার কোপ লাগতো, তাহলে হয়তো ফয়সালকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে পারতাম না। তখন কি যে হতো মহান আল্লাহই ভালো জানেন। ওই দিনটির কথা আজও মনে পড়লে আমার শরীর শিহরে ওঠে।
Leave a Reply