1. tanvir.love24@gmail.com : স্টাফ রিপোর্টার :
  2. news@nagornews24.com : নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

জুলাই ফিরে এলেও, মাসুরুরের ন্যায়বিচার আজও আসেনি

  • সময়: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
  • ১৬ বার

আবিদ উল্যাহ জাকের

ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটির ছাত্র মাসুরুর হাসানের জীবনে ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়ে আছে। ওই দিন রাজধানী ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়ে শুরু হয় তার জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়।

মাসুরুর জানায়, প্রথমে ডিবি তুলে নেয় তার মামা ও মামাতো ভাইকে। তাদের ওপর চালানো হয় ভয়ভীতি ও চাপ—মাসুরুরের অবস্থান না জানালে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর মাসুরুরকেও তুলে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

পরবর্তীতে মাসুরুরের নিখোঁজের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনের প্রস্তুতি চলাকালীনই পথিমধ্যে ডিবি তুলে নেয় তার বড় ভাই মাহদী হাসান মুয়াজকে।

এরপর শুরু হয় টানা পাঁচদিনের গোপন আটক ও নির্যাতন। মাসুরুর জানান, তাকে মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়, যেখানে চলে নিরবচ্ছিন্ন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় নানা মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য।

পাঁচদিন পর তাকে আদালতে হাজির করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একটি অস্ত্র মামলা—যেখানে অভিযোগ করা হয়, তিনি এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করে তার পিস্তল ছিনিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এই মামলার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আজও হাজির হয়নি, এবং মাসুরুর নিজেও তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন।

ডিবি কর্তৃপক্ষ তার ১০ দিনের রিমান্ড চাইলেও, শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে বিচারক মাত্র ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত থেকে ফিরে আসার পরও তাকে পুনরায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানেই তাকে দেখানো হয় তার বড় ভাই মাহদী হাসান মুয়াজের ছবি—মলিন মুখ, ছেঁড়া পাঞ্জাবি, ক্লান্ত দেহ। মাসুরুর বলেন, “ভাইকে এমন অবস্থায় দেখে মনে হলো বুকটা ফেটে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে কান্না চেপে রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি।” দুই ভাইয়ের ওপর ঘটে যাওয়া এই নির্যাতন আজও বিচার পায়নি।

এক বছর পার হয়ে গেলেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। বরং মাসুরুরের জীবনে আজও ‘অভিযুক্ত’ হওয়ার কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “ যদি আমি দোষী হই, তাহলে গ্রেপ্তার করুন, জেলে নিন—দরকার হলে ফাঁসিতে দিন। কিন্তু এমনভাবে বিচারহীনতার শিকলে আটকে রাখবেন না।”

তার বক্তব্যে ফুটে উঠে রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম চিত্র। মাসুরুর বলেন, “আমরা যারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি, রাজপথে দাঁড়িয়েছি, আজ আমরা শিকলবন্দি। আর অপরাধীরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায়।”

মাসুরুর হাসানের গল্প শুধুই একজন ছাত্রের নয়—এটি বাংলাদেশের হাজারো তরুণের কষ্ট, যারা স্বপ্ন নিয়ে সমাজ পরিবর্তনের পথে এগিয়েছিল, কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে এখন ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছে।

৩০ জুলাই তাই শুধুই একটি তারিখ নয়—এটি প্রতিবাদের প্রতীক, সত্য ও ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামী এক আত্মার গল্প, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বিচারহীনতা কেবল একজনের নয়—সমগ্র সমাজের পরাজয়।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন