তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্তব্ধ হয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ফেসবুকের টাইমলাইন ভরে ওঠে শোকবার্তা, স্মৃতিচারণা আর অশ্রুসিক্ত প্রার্থনায়। দেশের মানুষের মধ্যে নেমে আসে এক নীরব শোকের ছায়া।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাদি তার মৃত্যুচিন্তা ও লড়াই নিয়ে গভীর দর্শনের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সবাই যখন মৃত্যুটাকে ভীষণ ভয় পায়, আমি তখন হাসতে হাসতে আল্লাহর কাছে ভীষণ সন্তুষ্টি নিয়ে পৌঁছাতে চাই। আমি একটা ইনসাফের হাসি নিয়ে আমার রবের কাছে ফিরতে চাই।’
হায়াত-মউতের মালিক মহান আল্লাহ— এই বিশ্বাসকে ধারণ করে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘যিনি রাজনীতি করেন, যিনি বিপ্লবী, তার মৃত্যুটা হওয়া উচিত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আমি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখি— অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক তুমুল মিছিল হচ্ছে, আমি তার সামনে আছি; হঠাৎ একটা বুলেট এসে আমার বুক বিদ্ধ করল আর আমি হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে গেলাম।’
শরিফ ওসমান হাদির কাছে দীর্ঘ জীবন নয়, বরং জীবনের সার্থকতা ছিল মানুষের জন্য কাজ করা। তিনি বলেছিলেন, ‘৫০ বছর বাঁচলাম কিন্তু জাতির জন্য কোনো ইমপ্যাক্ট তৈরি হলো না— তেমন জীবনের চেয়ে পাঁচ বছর বেঁচে যদি ৫০ বছরের ইমপ্যাক্ট তৈরি করা যায়, সেটাই বড় সাফল্য। আমরা ইনসাফের চাষাবাদ করতে চাই। আমরা এমন এক প্রজন্ম রেখে যেতে চাই, যেন আমার মৃত্যুর পরেও এই লড়াই বন্ধ না হয়। বাংলাদেশে কিয়ামত পর্যন্ত যেন এই সংগ্রাম জারি থাকে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সাবেক এই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে (এসজিএইচ) পাঠানো হয়। সেখানেই দীর্ঘ লড়াই শেষে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
Leave a Reply